Friday, May 8, 2015

অবশেষে চূড়ান্ত হলো সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো


সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সম্ভাব্য সর্বনিম্ন বেতন ৮ হাজার ৫০০ টাকা ও সর্বোচ্চ বেতন ৭৮ হাজার টাকা (নির্ধারিত) রেখে পর্যালোচনা প্রতিবেদনের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।


 অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি এ খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ নিয়ে কমিটির দীর্ঘ বৈঠক হয়। 


বৈঠকে নতুন বেতন স্কেলের খসড়াটি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়। তবে আগামীকাল শনিবার ছুটির দিনও কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে খসড়াটির সামান্য পরিবর্তন আসতে পারে বলে বৈঠকের একটি সূত্র আভাস দিয়েছে।


 সূত্র আরও জানায়, পর্যালোচনা প্রতিবেদনে পে-কমিশনের সুপারিশ আমলে রেখে বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা, সরকারের সম্পদ সমাবেশ ও আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় রাখা হয়েছে। 


সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতন নির্ধারণ বিষয়ে পে-কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ আগামী সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।


 আগামী মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি তোলা হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো সেটা সম্ভব হবে না। কারণ অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রতিবেদনও পরিবর্তন হতে পারে। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন বেতন পর্যালোচনা কমিটির সদস্যসচিব ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ।


 তার কাছেও একই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এখন আমি কোনো কথা বলব না। অপেক্ষা করেন দেখতে পাবেন। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন গঠিত পে-কমিশন সর্বোচ্চ ৮৮ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলের সুপারিশ দিয়েছিল। 


সূত্রমতে, এতে আগের বেতন স্কেল থেকে সর্বনিম্ন গ্রেডে শতভাগই বাড়ছে। তবে সর্বোচ্চ গ্রেডসহ মধ্যবর্তী গ্রেড স্তরে বেতন বৃদ্ধির হার ন্যূনতম ৭৩ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ ওঠানামা করেছে। 


এ ছাড়া চাকরিজীবীদের সপ্তম বেতন স্কেলে নির্ধারিত বেতনের সঙ্গে অষ্টম পে অ্যান্ড সার্ভিসেস কমিশন গঠন হওয়ার পর নতুন করে ৪০ শতাংশ হারে মহার্ঘ্য ভাতা যোগ হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হলে এ সুবিধা উঠে যাবে। 


ফলে বিদ্যমান বেতন স্তর থেকে চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির হার গ্রেড ভেদে প্রায় ৪১ শতাংশ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত গড়ে বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। পর্যালোচনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বেতন কাঠামোর গ্রেড স্তর বিদ্যমান ২০টির পরিবর্তে পে-কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৬টির প্রবর্তন করা হবে কিনা এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বেতন পর্যালোচনা কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।


 এ দুটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বেতন পর্যালোচনা কমিটি ২০টি গ্রেড ধরে নতুন বেতন স্কেলে পুনর্নির্ধারিত সম্ভাব্য গ্রেড স্তর কেমন হবে এবং ১৬টি ধরা হলে গ্রেড স্তর কেমন হবে তাও চূড়ান্ত করেছে।


 এই দুই স্তরেই বেতন কাঠামো হিসেব করে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন দেয়া হবে। ওই গ্রেড স্তরে সর্বনিম্ন গ্রেড ৮ হাজার ৫০০ টাকার পাশাপাশি বিকল্প অপশন হিসেবে ৮ হাজার ২৫০ টাকারও প্রস্তাব থাকছে।


 অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন বেতন কাঠামো আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। এ ক্ষেত্রে একসঙ্গে শতাভাগ বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করা হবে না। পর্যায়ক্রমে দুই থেকে তিন ভাগে বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে মন্ত্রণালয়।


 এ জন্য আগামী বাজেটে বেতন-ভাতা খাতে বর্তমানের চেয়ে অতিরিক্ত ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, নতুন বেতন স্কেল এপ্রিল থেকেই বাস্তবায়নের চিন্তা ছিল সরকারের।


 কিন্তু চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চলতি বাজেটে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। যে কারণে বাস্তবায়ন পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। 

সরকারি চাকরিজীবীদের শতভাগ বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করে গত ২১ ডিসেম্বর অষ্টম বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। কমিশনের রিপোর্ট পেয়ে সরকার একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে।


 গত ১ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই সময় কমিটিকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে বেতন কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।


 কিন্তু পরে কমিটির কার্যকাল বাড়ানো হয়। ইতিমধ্যে কমিটির কার্যকাল প্রায় সাড়ে চার মাস পার হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্যদের মধ্যে আছেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব।