Saturday, May 9, 2015

যৌনকর্মীদের বেশি নির্যাতন করে পুলিশ ও মাস্তান

যৌনকর্মীদের অভিযোগ- তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি নিপীড়ন করে পুলিশ আর লোকাল মাস্তান। 

দুইয়ের নানাবিধ আচরণে বারবার হুমকির মুখে পড়ছে তাদের পেশা। আর নিজেদের পাড়া ছেড়ে ভাসমান হয়ে ওঠার পেছনে আছে জমি দখলের রাজনীতি।


 যৌনকর্মীরা বলছেন, চিকিৎসা থেকে শুরু করে মৌলিক কোনও অধিকার তাদের জন্য নিশ্চিত করেনি রাষ্ট্র।

অপমান, লাঞ্ছনা আর জীবনের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে তারা বলছেন, রাষ্ট্র দায়িত্ব নিতে না চাইলে এটাকে নিষিদ্ধ পেশা করে তাদের মেরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হোক।


 এদিকে, অধিকারকর্মীরা বলছেন, যৌনকর্মীদের ওপর পুলিশি ও এলাকার মাস্তানদের হয়রানি বন্ধ করে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে। 

যৌনকর্মীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে অতীতের হয়রানিমূলক ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তারা। 


পুলিশের আচরণ সর্ম্পকে ৩০ বছর বয়সী যৌনকর্মী সালমা (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমি প্রায় একযুগ ধরে এ পেশায় আছি। কাজের সময় পুলিশি হয়রানি ঘটলে সেটা মেনে নেওয়া যায় কিন্তু এখন আমাদের রাস্তাঘাট থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নানা মামলায় ফেলে দেওয়া হয়।’

নিজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বলেন, ‘তিন-চারমাস আগে রাস্তায় এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় আমাকে আটক করে মিরপুর থানা পুলিশ। রাতে ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হলেও আমাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়।


 এমনকি পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার পরও আমাকে চালান করে দেওয়া হয়।’ সমাজ তাদের ন্যূনতম সম্মান দেখানো হয় না অভিযোগ করে সালমা বলেন, ‘সাংবাদিকরা শুধু আমাদের ছবি তুলে এখানে-সেখানে দিয়ে দেয়।

 আমি এই পেশায় আছি এটা আমার পরিবারের সদস্যরা নাও জানতে পারে। এটুকু নিরাপত্তাও আমরা আশা করতে পারি না এখন।’ আগারগাঁও এলাকায় তার সঙ্গে কথা বলার সময় পাশে ছিলো রাহেলা (ছদ্মনাম)।


 তিনি শোনান আরেক অভিজ্ঞতার কথা, ‘একবার আমার অ্যাকসিডেন্ট হইলো। গাড়ির নিচে পড়তে লাগছিলাম। আমারে দেইখা গালি দিয়া পুলিশ আমারে হাসপাতালে নিবো কি! গাড়ি আটক কইরা রওনা দিলো। যাওয়ার সময় আমারে কইছিলো- আটক গাড়ির মালিকের কাছ থিকা যে টাকা পাইবো, সেখান থিকা ভাগ দিবো।


 কিয়ের কি,আর দেখা নাই।’ রাহেলা বলেন, ‘কাজের সময় পুলিশকে টাকা দিতে হয় আর কাজ শেষে পাড়ায় ঢোকার সময় মাস্তানগুলারে দেই। তারপর নিজের শরীর ছাড়া কিছু নিয়া ঘরে ফেরা হয় না।’ ভাসমান যৌনকর্মীদের বাইরে যারা যৌনপল্লীতে থাকেন তাদের পড়তে হয় আরেক বিপদে। 


 যৌনকর্মী সানজিদা (ছদ্মানাম) বলেন, ‘দুইশ’ বছরের পুরনো এই পল্লী প্রথমবার উচ্ছেদের সময় যে সম্পদ লুট হয়েছিলো সেটা আমরা কোনওদিনই ফিরে পাব না। সেখানকার সাড়ে তিন একর জায়গার মালিক ছিলেন ৩৯ জন। জমি খালি করার জন্য শত শত যৌনকর্মীকে একরাতে উচ্ছেদ করলো।


 মামলা দিতে গেলে মামলা না নিয়ে উল্টা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করলো। দ্বিতীয় দফায় সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় কিছু কর্মীকে নিয়ে বসানো গেলেও সবাই ফিরতে পারেনি।’ রেশমা (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমার টাকার খুব দরকার ছিলো। এলাকার মাস্তানদের আমার আয়ের টাকার ভাগ দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় প্রথমে তারা আমাকে ধর্ষণ করে এবং তারপর সব টাকা ছিনিয়ে নেয়। 


এই মাস্তানরা তাও সন্তুষ্ট হয় নাই। এরপর তারা আমাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে চলে যায়।’ মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী এলিনা খান বলেন,‘সেই নারায়ণগঞ্জ থেকে আমরা দেখে আসছি। 

 পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদের ঘটনা একেবারেই সঠিক সিদ্ধান্ত না। যৌনকর্মীদের এভাবে উচ্ছেদের ফলে ভাসমান কর্মীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তাদের মৌলিক অধিকার পাওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে।’


 এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘যৌনপল্লীগুলোর পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে ব্যাঘাত ঘটছে সেটা স্পষ্ট।


 যৌনকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলায় রাষ্ট্রের আইনগত সহায়তা দেওয়া উচিত।’ কেন তাদেরকে ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হতে হবে সে প্রশ্ন উত্থাপন করেন তিনি। পুলিশকে জবাবদিহিতার ভেতর আনারও আহ্বান জানান তিনি।

-উদিসা ইসলাম