Saturday, April 25, 2015

আর যাই হোক ভূমিকম্প কিন্তু সাম্যবাদে বিশ্বাসী। এরা ধনী মারে। বস্তির গরীব লোকের ভূমিকম্পে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম - রফিকুল ইসলাম পিএইচডি


জ্বরে কাঁপি, ভয়ে কাঁপি, মাঝে মধ্যে ইচ্ছা করে কাঁপি। আমার কাঁপাকাঁপিতে মানুষের কোন কিছু যায় আসে না। ভূমিও কাঁপে।

 এ কাঁপা কাঁপি নিয়ে মানুষ চিন্তিত। ভূমি কাঁপলে জানমালের ক্ষতি হবে। ভূমির কাঁপন মানে ভূমিকম্প নিয়ে মানুষের আতংকের শেষ নাই। 

আমরা জ্বরে কাঁপি। জ্বর হলে শরীরের কোষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রন থাকে না। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কাঁপতে থাকে। ছোটবেলায় দেখেছি শীতকালে মুখের চোয়াল কাঁপে। মাঝে মধ্যে কাঁপার পরিমান বেড়ে গেলে নীচের পাটির দাঁতের সাথে উপরের পাটির দাঁত লেগে ঠক্ ঠক্ আওয়াজ হয়। 

স্নায়ুতন্ত্র চোয়ালের উপর নিয়ন্ত্রন হারায়। আমরা না হয় কাঁপাকাঁপি করলাম। আমাদের স্নায়ুতন্ত্র আছে এবং নিয়ন্ত্রন হারায়। ইচ্ছা করেও আমরা কাঁপতে পারি। কিন্তু ভূমি কাঁপবে কেন? এর স্নায়ুতন্ত্র আছে কি ? পৃথিবীর কোন স্নায়ুতন্ত্র নাই। 


এটার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ভূমি কাঁপে না। পদ্মার পারে বাড়ী । প্রতি বছর পদ্মা ভাংগে। একুল ভাংগে ও কুল গড়ে। পদ্মার এই লীলা দেখতে দেখতে বড় হয়েছি।

 নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পদ্মার স্রোত, বাতাসে তৈরী ঢেউ-এর বাড়ি, ভিতর দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যায়। পাড়ের কিছু এলাকা কেঁপে উঠে ডেবে যায়। এক সময় পদ্মায় মিশে যায়। গ্রাম গঞ্জ বিলিন হয়।

 পদ্মার বুকে আঙ্গুল দেখিয়ে লোকে বলে এখানে বড় একটা গ্রাম ছিল। পদ্মার ভাংগনে ভূমি ধসের কাঁপন আমার দেখা হয়েছে।


 ভূমি কাঁপতেও দেখেছি। তেমন কোন ভীতির সৃষ্টি হয়নি। ১৯৬২ সালের গোড়ার দিকের কথা। বাবা তখনও বেঁচে আছেন। একটা মারফি রেডিও ছিল। পৃথিবীর প্লেটতত্ব্ব নিয়ে গবেষকগণ আলোচনা শুরু করেছেন। 

এই সূত্র ধরে বাংলাদেশকে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রেডিওতে ভূমিকম্প প্রবন এলাকা বলা হলে কি হবে। এক মুখ হতে আর এক মুখ এইভাবে গুজব ছড়িয়ে পড়লো। বাংলাদেশে কয়েক দিনের মধ্যে ভূমি কম্প হবে। নদী ভাঙ্গনের ,ভূমি ধসের কথা জানা থাকলে ও ভূমিকম্প সমন্ধে কোন কথা জানা ছিল না। 

মানুষের চোখে মুখে ভীতি উদ্বিগ্নতা। সবাই জানতে চাই, ‘কবে কখন ভূমিকম্প হবে?' ‘ভূমিকম্প হলে কি হবে?' ‘ভূমিকম্প হলে কি করতে হবে?' 


আমাদের জমিতে কাজ করে ইউনুস চাচা। আমি স্কুলে লেখাপড়া করি। ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিত। চাচারও একই প্রশ্ন। ‘চাচা, আমার জানা নাই' - জবাব দিলাম। 'তোরা লেখাপড়া জানা লোক। যদি এ কথা বুলিস তাহিলে হাঁমরা কি করবো।' ইউনুস চাচা আক্ষেপ করলো।

 আমি চাচার মুখের দিখে অসহায়ের মত চেয়ে থাকলাম। ইউনুস চাচা জানতে চাইল। 'আলেপ কবর্যা জ বুলছিলো, ডুইব্যা লদী হইয়ে যাইব্যে। লদী ভুই হবে। বাড়ীঘর ডাইব্যা মাটিতে ডুইব্যা য্যাবে। বাবা এইট্যা কি ঠিক?'

আবারও অসহায়ের মত বললাম, 'জানি না বাবা।' জবাব শুনে ইউনুস চাচা রেঁগে বললো। ‘তাহিলে কি জানিস। লেখা পড়হা শিখছিস কির লাইগ্যা।' কথা বাড়াতে চাই না তাই চুপচাপ থাকলাম। ইউনুস চাচাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলল।


 ভূমিকম্প নিয়ে আলোচনায় ক্ষ্যামা দিয়ে উঠে গেল। সব ভাইবোনকে বাবা বিকালে ডেকে ভূমিকম্প হচ্ছে টের পাওয়ার সাথে সাথে আকাশের নীচে বসার উপদেশ দিলেন। বাবার কাছে জানতে চাইলাম, "ভূমিকম্প হচ্ছে কি করে টের পাবো।"

 তিনি জানালেন, "দরজার শিকল নড়বে। চেয়ারগুলো নড়াচড়া করবে।" বাবার উপদেশ থেকে বুঝলাম ভূমিকম্প হলে বাড়ীঘরের ছাদ চালা পড়ে যেতে পারে। ছাদের চাপা পড়ার হাত হতে রক্ষা পেতে হলে খোলা আকাশের নীচে যেতে হবে।

 বাবার কথায় বুঝলাম না জমি, নদী হলে রক্ষা পাবো কি করে? ক'দিন খুব ভয়ে ভয়ে কাটলো। বাবা মারা গেলেন। সত্যিকারের ভূমিকম্প দেখা না হলেও আমার জীবনে ভূমিকম্প ঘটে গেল। ভূমিকম্পের সেই ফাঁটল আজও হৃদয়ে।

 

হাটে, বাজারে, চায়ের দোকানে ভূমিকম্প নিয়ে আলোচনা চলছে। কবে হবে? হলে কি করতে হবে? হলে কি হবে? এই নিয়ে সবাই ব্যস্ত। গোদাগাড়ী কিছু পাকা দোতলা বাড়ী হয়েছে। একজন জানালো, খোলা আকাশের নীচে যেতে না পারলে খাটের নীচে লুকাতে হবে। বুঝলাম না।

 ছাদটা যদি ভেংগে পড়ে বেচারা খাট কি তা ঠেকাতে পারবে। সেই পাখিটার কথা মনে পড়লো যা আকাশের দিকে পাগুলো ছড়িয়ে ডানা মেলে থাকে। 

আমার মত অনেকের জিজ্ঞাসা, "কেন থাকে?" লোকে বলে, পাখিটা মনে করে আকাশটা ভেংগে পড়বে। ভেংগে পড়লে সে তা পা দিয়ে ঠেকাবে। আমার কাছে খাট আর পাখিটাকে এক মনে হলো। খাটের নীচে লুকানোর বুদ্ধিটা ভালো লাগলো না।


 মুচকি হাসলাম। কিছু বললাম না। ক'দিনবাদে ভূমিকম্প নিয়ে আলোচনা থেমে গেলো। এসএসসি পাশ করে রাজশাহী কলেজে পড়ি। ৪ তলা নিউ হোস্টেলের ২ তলায় থাকি। ভূমিকম্পের কথা মনে হলে ভাবি খোলা আকাশের নীচে যাওয়ার সময় পাবো তো। এইচএসসি পাশ করে বুলগেরিয়ায় পাড়ি দিলাম। 

এক বছর রাজধানী সোফিয়ায় বুলগেরিয়ান ভাষা শিখে ভানা শহরে থাকি। কৃষ্ণ সাগরের তীরে ২৪ তলা ছাত্রাবাসের ৪ তলায় আমার রুম। রাত ৯:৩০ মিনিট। আমি পড়ার টেবিলে বসে আছি। মনে হলো পুরো ব্লিডিংটা নড়ছে। এক দৌড়ে নেমে এলাম। আমার মত অনেক লোক নেমে আসছে। 


খোলা আকাশের নীচে নামলাম। হোস্টেলে বিবাহিত ছাত্র-ছাত্রীরাও থাকতো। এক মা বাচ্চাকে রুমে রেখে দিয়ে নিজে জীবন নিয়ে নেমে এসেছেন। ৩য় তলায় থাকে। বাচ্চাটা চিৎকার করে কাঁদছে। মেয়েটার স্বামী বাহিরে।

 হঠাৎ নিজেকে ফিরে পেয়ে আশেপাশের সবার হাত-পা ধরা শুরু করলো, "আমার ছেলেটাকে দয়া করে এনে দিন না, ভাই।" কে শোনে কার কথা। একজন ক্ষেপে গিয়ে বললো, "নিজে নিজের বাচ্চাকে ফেলে এসেছেন। এখন আপনার বাচ্চার জন্য কে জীবন দিতে যাবে?"

মা-টি লজ্জায় মাথা নিচু করে চুপ হলো। ২৪ তলার ঘরগুলো হতে কিছু ইট ছিটকে নিচে পড়েছে। বেশ কিছু মানুষ গিয়ে এগারো বারো তলার মাঝখানে লিফটে আটকা পড়েছে।


 এত কিছুর পরও মা-টির জন্য মায়া হলো। কাউকে কিছু না জানিয়ে সোজা তিনতলায় দৌড় দিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে করে এনে তাঁর মাকে দিলাম।

 মা-টা কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। বললাম, "আপনার বাচ্চাটা নিন।" মা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তাঁকে চুমু খেতে লাগলো। ভূমিকম্পের পর প্রায় ২ ঘন্টা পার হয়ে গেছে। 


কেউ ঘরে ফিরছে না। আমি বললাম, "আর কিছু হবে না। চলেন ঘরে যাই।" আমার প্রস্তাবে কেউ রাজি হলো না। আমি একা ঘরে ফিরলাম। ইলেকট্রিসিটি ফিরে এসেছে। টিভিটা ছেড়ে দিলাম। ব্রেকিং নিউজ চলছে। পরে অনেকেই ফিরে আসলো। তবে ২৩ ও ২৪তলার কেউ ফিরে আসেনি।

 তাঁরা খোলা আকাশের নীচে রাত কাটালো। রুমগুলোর অবস্থা ফিরার মতও ছিল না। ভূমিকম্পের এপি সেন্টার রুমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্ট। কম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৭.৮। বুখারেস্ট শহর মাটির সংগে মিশে গেছে। 

রুমানিয়ার সাথে লাগানো ছোট্ট একটা শহর রুমে। সেখানে কিছু ঘরবাড়ি ধসে ৭৮ জন লোক মারা গেছে। জখম হয়েছে অনেক

। বুখারেস্ট-এর কোন খোঁজ-খবর পাওয়া যাচ্ছে না। রুমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নিকোলাই চাউস্কেু আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্য চাইলেন। মনে মনে ঠিক করলাম, টাকা কড়ি দেয়ার সামর্থ্য নাই। গায়ে গতরে খেটে উদ্ধার কাজ করে দিবো।

ভূমিকম্পের তিনদিন পর বুখারেস্টে গেলাম। ট্রেন থেকে নেমেই টের পেলাম লাশের গন্ধ। যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁরাও লাশের মত। বিদ্যুৎ, পানি, ডাক্তার, ঔষধ কিছুই নাই। জখম মানুষগুলো মরছে খাবার, পানি, চিকিৎসার অভাবে। গর্ত খুড়ে লাশ চাপা দিলাম ৫দিন। ৫দিন পর আমার করার মত আর কাজ নাই। 

বুলগেরিয়ায় ফিরে এলাম। বুখারেস্টের স্মৃতি আমাকে বলে দেয় বিশাল দালানের শহরে খোলা আকাশও অসহায় মানুষগুলোকে বাঁচাতে পারে না। ২০০৮ সাল। 

আমি নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম-সচিব। একই সংগে একটা প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক। অনামিকা আজমী এই প্রকল্পের প্রজেক্ট সেক্রেটারী। শান্তিনগরে ৯তলায় তাঁদের নিজেদের ফ্লাটে থাকে।

 রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বিছানাটা একটু নড়াচড়া করতে দেখা গেল। তারপর সব ঠিকঠাক তেমন কিছু হয়নি। পরদিন ভোরে দেখলাম পত্রিকায় লিখেছে ঢাকায় মৃদু ভূমিকম্প। ভূমিকম্প মোকাবেলার কোন প্রস্তুতি নাই। অনামিকা অফিসে এসেই, "স্যার, ভূমিকম্প টের পেয়েছিলেন?" জানতে চাইলো। 

জবাবে বললাম, "তেমন কিছু না।" শুনেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালো। "আমার মত নয় তলায় থাকলে টের পেতেন। পুরো বিল্ডিং দুলছিল" "মনে হচ্ছে খুব ভয় পেয়েছেন? মরতে চান না।" হেয়ালি করলাম। জবাবে সে বললো, "আমি মরতে চাই না। অনেকদিন বাঁচতে চাই। মাটি চাপা পড়ে মরবো, কিছুতেই না।" শুনে আমি হাসলাম। ২ বছর গত হয়ে গেছে। প্রকল্পটা শেষ হয়ে গেছে। অনামিকা চলে গেছে। তাঁর আরও একটা সন্তান হয়েছে। ২০০৯ সালে অতিরিক্ত সচিব হয়ে নির্বাচন কমিশনেই রয়ে গেছি।

 ২০১০ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর রোজা শেষ হলো। সকালে ঈদ। রাত ১১টা পার হয়েছে। শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলাম। খাটটা নড়ছে। লাফ দিয়ে ছেলের কাছে আসলাম। বউ ছেলেকে বললাম, "ভূমিকম্প হচ্ছে।" ছেলে বললো, "চলো বাবা বাহিরে চলে যাই।"

 মনে পড়ে গেলো বুখারেস্টের কথা। কোথায় যাবো? উঁচু এই ইট-সিমেন্টের পাহাড় আমাদের ছাড়বে না। "কোন লাভ নাই, বাবা।" ছেলেকে বললাম। "কেন বাবা?" ছেলে জানতে চাইলো। তেমন কিছু হলে বাহিরে গিয়ে লাভ হবে না। তার আগেই সব শেষ হয়ে যাবে। আগুন লেগে যেতে পারে, মেইন সুইচ অফ করে দিলাম।


 এখন বিপদমুক্ত। সুইচ অন করে টিভি চালালাম। ব্রেকিং নিউজ। ঢাকাসহ সারাদেশে মৃদু থেকে মাঝারী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। উৎপত্তিস্থল মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের মাঝখানে। কম্পন মাত্রা রিখটার স্কেলে ৪.৮। 


কম্পনটি সৃষ্টি হয়েছে ভুপৃষ্ঠের ১৬ কিলোমিটার গভীরে। ৭০ কিলোমিটার দূরে মাটির ১৬ কিলোমিটার গভীরে তাই এই দশা। আর একটু কাছে হলে, একটু কম গভীরে হলে কি হতো কে জানে। শুয়ে পড়লাম সকালবেলা ঈদ।

 ঈদ শেষে রাষ্ট্রপতির দাওয়াতে বঙ্গবভনে যেতে হলো। রাস্তা ফাঁকা। একটু আগেই পৌঁছলাম। তখনও মহামান্য রাষ্ট্রপতি কুশল বিনিময় শুরু করেননি। আমাদের একটা রুমে বসতে দেয়া হলো। রুমে ছড়াকার তালুকদার ভূমিকম্প নিয়ে জোক করছেন।


 অনেকে উপভোগ করছে। আমার ভালো লাগছিলো না। বিরক্ত লাগলেও হজম করতে হলো। ভাগ্য ভালো ডাক পড়লো। লাইনে দাঁড়ালাম। কুশল বিনিময়, পরিচিত জনের সংগে কোলাকুলি, সামান্য খাওয়া শেষে বাড়ী ফিরলাম।

টিভিটা খুলে বসে আছি। নীচে লিখা রাজশাহীসহ উত্তর অঞ্চলের সকল জেলায় মাঝারী ভূমিকম্প। উৎপত্তিস্থল আসাম। কম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৫.২। 

তেমন কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। গতরাতের ভূমিকম্পেও কোন প্রানহানি ঘটেনি। নারায়নগঞ্জে ২টি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। জনমনে আতংক বিরাজ করছে। মা ছোট ভাই থাকেন রাজশাহীতে। একতলা বাড়ী। ক্ষতি হয়নি জানি।

 তবুও খোঁজ নেয়ার জন্য টেলিফোন করলাম। সবাই খাওয়া দাওয়া গল্প গুজব নিয়ে ব্যস্ত। ছোট ভাইয়ের বড় মেয়ে টেলিফোন ধরলো। ভূমিকম্পের কথা বললাম। তারা জানেই না। টিভি দেখার টের পাইনি। ভালো টের পাইনি। 

না হলে ভয় পেতো। তাঁদের খুশিটাও শেষ হয়ে যেতো। টেলিফোন শেষ করে ভাবছি, রাতে ২বার মৃদু ভূমিকম্প মাদারীপুরে। পরের দিন আসামে। কেন এসব? কিসের লক্ষণ? কোন আগ্নেয়গিরি নাই আশেপাশে। লাভা উদগীরণ হয় না।


 তবে ভূমিকম্প কেন? জিজ্ঞাসার কোন জবাব পাচ্ছি না। উত্তরে আসাম। দক্ষিণে মাদারীপুর। প্রতিদিন বৃষ্টিতে ভূমিধসে হাজার হাজার টন মাটি, পাথর, বালি এসে পড়ছে মাদারীপুরের আশেপাশে। মধ্যে ঢাকায় আমরা টন টন ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে কংক্রিটের পাহাড় তৈরী করছি। 

আসামের পাহাড়, মাদারীপুরের নদী, সমুদ্র, ঢাকার জলাভূমি পৃথিবীর কোরে ভারসাম্য সৃষ্টি কর রেখেছিল। পৃথিবীর কোরে এ ভারসাম্য প্রাকৃতিকভাবে এবং মানুষের দ্বারা নষ্ট হয়েছে। পৃথিবীবে তা ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভাংগি, ঢাকার ভূমিকম্প কি আড়মোড়া ভাংগা।

 না অন্য কিছুর লক্ষন! পত্রিকাগুলো লিখছে, 'আজ হোক, কাল হউক, বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হবে।' 'আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।' 

'মাঝারী থেকে বড় কোন ভূমিকম্পে ঢাকায়, ২ লাখ লোক মারা যাবে।' গরীব লোকে লোকারণ্য দেশ কি প্রস্তুতি নিবে। সবাই শুধু দুষছে সরকারকে। লেখাটা পড়ে আমার এক বন্ধু বললো, 'ভূমিকম্প নিয়ে ফাজলামো করছো। টের পাবা।'

জানি পাবো। পেলেও করার কিছু নাই। নিয়তিকে মেনে নিবো। এছাড়া আমাদের আর কিইবা করার আছে। আর যাই হোক ভূমিকম্প কিন্তু সাম্যবাদে বিশ্বাসী। এরা ধনী মারে। বস্তির গরীব লোকের ভূমিকম্পে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম।